আয়ারল্যান্ডের স্টুডেন্ট ভিসার জন্যে আবেদন

আমি কখনোই ভিসার জন্যে আবেদন করিনি। কাজেই এই সম্পর্কে আমার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু জীবন তো এমনই যখন যেটা সামনে আসবে সেই অনুযায়ী আগাতে হবে। অজানাকে জানতে হবে। তারপর আল্লাহর সাহায্য, নিজের আপ্রাণ চেষ্টা, এবং আশেপাশে মানুষের সহযোগিতার মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত সফলতার দেখা মেলে। 

আমি শুধু আয়ারল্যান্ডের লং-টার্ম স্টাডি ভিসার এই লিঙ্কটা পেয়েছিলাম। তারপর কী কী ডকুমেন্ট লাগবে তা ঐ লিঙ্ক থেকে পড়ে জেনেছিলাম। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশে কোনো আইরিশ অ্যাম্বাসি নাই। কাজেই যখন আমি আমার ভিসার আবেদনের কভার লেটারটা লিখতে যাব তখন বুঝতে পারছিলাম না কার বরাবার লিখতে হবে। তারপর সেটা আমার মেন্টরের কাছ থেকে জেনে নিয়েছিলাম। এরকম এটা সেটা নানা প্রশ্ন অর্থাৎ যখন যে প্রশ্ন উদয় হতো আমি তা ভাইয়ার (মেন্টর) থেকে জেনে নিয়েছি। তারপর আমার পিএইচডির কলিগ যারা ইতোমধ্যে ভিসা পেয়ে গেছে অন্য দেশ থেকে তাদেরও সহযোগিতা পেয়েছি নানা তথ্যের মাধ্যমে। তাদের সকলের প্রতিই আমি কৃতজ্ঞ। আবেদনের জন্যে যেসব কাগজ-পত্র অবশ্যই লাগবে তার একটা তালিকা আমি দিচ্ছি-- 

  • অনলাইনে পূরণকৃত ফরম সিগনেচারসহ (সিগনেচার অবশ্যই পাসপোর্টের সাথে মিল থাকতে হবে) 
  • কভার লেটার 
  • পাসপোর্ট (নতুন ও পুরান দুটোই দিতে হবে)
  • দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি। সাইজ ৩৫ X ৪৫। (ছবিটা অবশ্যই ৬ মাসের মধ্যে হতে হবে)
  • অফার লেটার (আপনি যে ইউনিভার্সিটি থেকে অফার পেয়েছেন সেই লেটার) 
  • ভিসা সাপোর্ট লেটার ইউনিভার্সিটি থেকে। 
  • সিভি
  • জব এক্সপেরিয়েন্স লেটার
  • যদি আপনার স্টাডি গ্যাপ থাকে তাহলে সেটার এক্সপ্লানেশন লেটার অবশ্যই লিখতে হবে
  • বার্থ সার্টিফিকেট 
  • সকল রেজাল্টের কপি এবং অরিজিনাল কপি 
  • অরিজিনাল কপি ফেরত চেয়ে একটা লেটার লিখতে হবে
  • আইইএলটিএস সার্টিফিকেট 
  • ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ট্রানস্লেশন ও নোটারী করে দিতে হবে (বাবা-মায়ের আইডি কার্ডের জন্যেও একই কাজ করতে হবে)
  • ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট ও সার্টিফিকেট ( ফুল স্কলারশীপে এটা লাগে না তবুও চাইলে দিতে পারেন) 
  • হেলথ ইন্সুরেন্স (চাইলে দিতে পারেন)
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট 
  • আপ্লিকেশন সামারি 
মোটামুটি এইসব ডকুমেন্ট অবশ্যই সাবমিট করতে হবে। এছাড়া আপনার প্রয়োজন এবং প্রোফাইল অনুযায়ী যা লাগে তা দিবেন। 

শুরুতেই বলেছি আমি আসলে কিছুই জানতাম না কীভাবে ভিসার জন্যে আবেদন করতে হয়, কীভাবে পেমেন্ট করতে হয় বা কীভাবে ডকুমেন্ট পাঠাতে হবে দিল্লিতে এসবের কিছুই জানতাম না। কাউকে জিজ্ঞেস করেও সঠিক কোনো তথ্য পাইনি। আবার আমার কাছের কেউ আয়ারল্যান্ড থাকেও না। সো অবস্থাটা কেমন ছিল সে শুধু আল্লাহই জানে। তবুও নিজে যা বুঝেছি সেই অনুযায়ী আগাচ্ছিলাম। তো আমি ভাবছিলাম যেহেতু বায়োমেট্রিক লাগে না বাংলাদেশীদের জন্যে তাহলে হয়তো আমার ডকুমেন্টগুলা ডিএইচএলে কুরিয়ার করে দিলেই হয়ে যাবে। কিন্তু যত সহজ ভাবনা কাজটা তত সহজ না। তারপর ভেবেছিলাম যেহেতু অনলাইনে আবেদন করা যায় তাহলে পেমেন্ট করার জন্যে ভিসা প্রিপেইড কার্ড হলেই হবে এবং ডলার এন্ডর্স করা থাকলেই চলবে। তো আমি ইবিএলে একটা কার্ড অর্ডার করলাম এবং এক সপ্তাহ অপেক্ষা করলাম কার্ড এক্টিভেশনের জন্যে। তারপর ডলার নিলাম ব্যাঙ্ক থেকে অর্থাৎ ভিসা ফি দেয়ার জন্যে আমি মোটামুটি প্রস্তুত। এবার আমার আবেদনের পালা। 

আবেদনের প্রথম ধাপে আপনাকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে এবং সেখান থেকে অ্যাপ্লিকেশন সামারিটা নিতে হবে। তো আমি আবেদন শেষ করলাম সফলভাবেই কিন্তু পেমেন্টের কোনো অপশন খুঁজে পেলাম না। কী একটা অবস্থা! কিছুই জানতে পারছি না ঠিক কোন মাধ্যমে আবেদনের ফি দিতে পারবো বা ভিসা অফিসে আমার কাগজপত্রগুলা পাঠাতে পারবো? পুরাই অন্ধকার লাগছে! আবেদন শেষ করার পর যোগাযোগের জন্যে তারা দিল্লি এম্বাসির একটা ইমেইল আইডি, ফোন নাম্বার দিয়ে থাকে। সো আমি যেহেতু কিছুই জানতে পারছি না তাই আমার জন্যে ঐ ইমেইল আইডিটাকেই আশার আলো মনে হয়েছিল। আমি তাদেরকে ইমেইল করলে জানতে পারবো কীভাবে বাংলাদেশ থেকে ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করা যায়। দিলাম একখান চিঠি (ইমেইল) পাঠিয়ে। অপেক্ষার পালা শুরু। উত্তর আসবে কি আসবে না! তারপর ভাবলাম সকালে ঐ দিল্লি এম্বাসির নাম্বারে ফোন করে জানব। সকাল পর্যন্ত কোনো ইমেইলের উত্তর পেলাম না (পরে অবশ্য পেয়েছিলাম ইমেইলের রিপ্লাই)। তাই কল দিলাম দিল্লি এম্বাসিতে। আমি জানতাম বাংলাদেশ থেকে কলরেট ১২ টাকা পার মিনিট। সো মোটামুটি ১৬০ টাকার মত ব্যালেন্স আমার ফোনে ছিল। মুহূর্তেই কয়েক মিনিটের ব্যবধানে কথা বলে সব ব্যালেন্স গেল আমার কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছুই হল না। শুধু আসল কথাটা জানলাম অর্থাৎ, বাংলাদেশ থেকে ভিসা ফি দেয়া যায় না। কোনো ওয়ে নাই। যা শুনে মাথায় একটা ভাঁজ পড়লো যেন!

এই মুহূর্তে দিল্লি যাওয়া আমার পক্ষে একদম অসম্ভব ব্যাপার। তার ওপর আমার হাতে অত সময়ও নেই। কারণ দিল্লি গিয়ে ভিসার জন্যে দাঁড়ালে আমার আরও মিনিমাম দেড় সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হত। ভিসা ফি দিতে চাইলে কলকাতা গিয়ে ভিএফএস কলকাতার মাধ্যমে ফি দিতে হবে তারপর ঐ কলকাতা থেকেই ওদের মাধ্যমে কাগজপত্র কুরিয়ার করতে হবে। 

আমি আগে থেকেই জানতাম বাংলাদেশ থেকে এজেন্টদের মাধ্যমে সাবমিশন করা যায়। কিন্তু এজেন্টরা তো কসাই। তাই তাদের ফি শুনে আমি ঐ পথে যাইনি। চেয়েছিলাম নিজে নিজে পেমেন্ট করতে এবং সাবমিট করতে। কিন্তু অবস্থা এমন বেগতিক দেখে ভাবলাম, যেহেতু আমি দিল্লি না গিয়ে নিজে নিজে কিছুই করতে পারছি না। আর আমি এই মুহূর্তে দিল্লি গেলেও বেশ অনেক টাকাই যাবে যাওয়া-আসাতে। তারপর সিকিউরিটির ব্যাপার আছে। আবার ঐ ভিএফএস কলকাতা তারাও যদি এজেন্টদের মতই হয়।  তাহলে বাংলাদেশ থেকেই এজেন্টদের মাধ্যমে অন্তত সাবমিশন সাপোর্টটা নেয়াই উত্তম। 

তারপর গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, আমি আমার সকল কাগজপত্র এজেন্টদের ঢাকা অফিসে সাবমিট করি। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর আমার সারা জীবনের অর্জন আইরিশ এম্বাসি দিল্লিতে পৌঁছাবে ইন শা আল্লাহ। আমি আবেদন করতে গিয়ে কোনো কার্পণ্য করিনি। একদম মন উজাড় করে দিয়ে আবেদন করেছি। যা লাগবে তাও দিয়েছি। যা লাগবে না আমার জন্যে সেটাও দিয়েছি। ফুল পিএইচডি স্কলারশীপ পাওয়ার বদৌলতে আমার কিছু জিনিস না সাবমিট করলেও হতো, তবুও আমি করেছি, নিজের শান্তির জন্যে। তারপর এই এজেন্ট অর্থাৎ ভিসা থিং এদের সার্ভিস খারাপ লাগেনি, ভালো ছিল।

আরো কিছু ব্যথা-বেদনা আড়ালেই রেখে দিলাম। সবশেষে, সমাধান হয়েছে এবং আমাকে দিল্লি যেতে হয়নি। এজন্যে আল্লাহর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। আলহামদুলিল্লাহ। 

এবার ভিসা পাওয়ার অপেক্ষার পালা শুরু হয়েছে। সাধারণত ২১ দিন লাগে। দেখা যাক আমার জন্যে কয়দিন লাগে। 

No comments

Powered by Blogger.